×

কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বা সম্পত্তির মুনাফা কিভাবে বিলি-বন্টন করা হবে তা তার মৃত্যুর পূর্বেই লিখিত বা মৌখিক ভাবে নির্ধারণ করে যাওয়ার আইন সম্মত ঘোষণাই হলো উইল বা অছিয়ত।

 সুতরাংউইল বলতে কোনো সুনির্দিষ্ট জিনিসের বা মুনাফার বা কোনো সুবিধাদির মধ্যে আনুতোষিক বাউপহার প্রদানের পদ্ধতিতে উইলকারীর মৃত্যু পর্যন্ত তা স্থগিত রাখার অধিকার দান করা।একজন উইলকারীর উইল মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে কার্যকর হয় যে উইল করে তাকে উইলকারী   এবং যার নামে উইল করা হয় তাকে উইল-গ্রহীতা বলা হয়। উইলের মূল উৎস কোরআন। 

১৯২৫ সালের উত্তরাধিকারী আইনের  (এইচ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় (তাহার মৃত্যুর পর)  যাবতীয় সম্পত্তি কিভাবে বিলি ব্যবস্থা হইবে তাহা যদি কোনো লিখিত দলিল দ্বারা নিরুপণ করে যায়, তবে তাকে উইল বলে।

 

উইল করার যোগ্যতাঃ   

             

নাবালক নয়,  এমন প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলমানই উইল বা অছিয়তের মাধ্যমে সম্পত্তি  হস্তান্তর করতে পারে কোনো নাবালকের ক্ষেত্রে যেখানে ওই নাবালক ও তার সম্পত্তি   দেখাশোনার জন্য একজন অভিভাবক নিযুক্ত করা হয়েছে অথবা ওই নাবালকের ২১ বছর   পূর্ণ হলেই সে পূর্ণবয়স্ক হয়েছে বলে ধরা হবে। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে নাবালকত্বের বয়স সীমাটি উইল, দানপত্র, ওয়াকফ ইত্যাদি বিষয়ে ১৮বছর পূর্ণ হলেই চলে।উইলের মূল বিষয়, হস্তান্তরটির ব্যাপারে দাতার পূর্ণউপলব্ধি বা বোঝার ক্ষমতা।তবে দানের ক্ষেত্রে উইলকারী যে ব্যক্তিদের ভরণপোষণ দিতে আইনগত বাধ্য ছিল তাদের   জন্য ভরণ পোষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে বাকি সম্পত্তি উইল করতে পারবে।

 

 উইল গ্রহীতার যোগ্যতাঃ

.সম্পত্তি হোল্ড করতে সক্ষম যেকোনও ব্যক্তি।

.অনাগত ব্যক্তি উইল-গ্রহীতা হতে পারেনা।তবে যদি উইলটি গর্ভে থাকা অবস্থায় করা হয় এবং উইল তৈরির তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে জন্ম হয় তবে তিনি আইনী উইল-গ্রহীতা হতে পারেন।

.উত্তরাধিকারীরা হতে পারেনাএই নিয়মটি কেবল তখনই শিথিল হয় যেখানে অন্যান্য   উত্তরাধিকারীরা তাদের সম্মতি দেয় সম্মতি দিয়ে একজন উত্তরাধিকারী নিজের ভাগ বাধ দিতে পারে তবে অন্যের নয় উইলকারীর মৃত্যুর সময় উত্তরাধিকারীর অবশ্যই অস্তিত্ব থাকা  অপরিহার্য।

 .ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উইল তৈরি করা যেতে পারে। 

বি.দ্র.  ভিন্ন ধর্মীয় কোনো ব্যক্তির উদ্দেশ্যে ও উইল করা যায়। 

 

যাদের উদ্দেশ্যে উইল করা যায়ঃ

. ব্যক্তির উদ্দেশ্যে 

.ধর্মীয় উদ্দেশ্যে


ব্যক্তির উদ্দেশ্যে উইল আবার দুই প্রকার।যথাঃ

. ওয়ারিশের বরাবরে উইল

.ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল।

 

সম্পত্তির কতঅংশ  উইল করা যায়?


কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার দাফন-কাফন ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর, উদ্বৃত্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক উইল করতে পারে না।উইলকারী মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী সম্মতি না দিলে উইলের মাধ্যমে বৈধ এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিমাণ সম্পত্তি দান কার্যকর হবে না।তবে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারে।১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনগত বৈধ।

 

উইলের ফর্মঃ


উইলের জন্য মুসলিম আইনে নিদির্ষ্ট কোনো ফর্ম নেই।মুসলিম আইনে উইল লিখিত না হলেও চলেমৌখিক উইল ও আইনগত ভাবে সিদ্ধ।তবে উইল লিখিত না হলে   অসুবিধা অনেক। এক্ষেত্রে উইল লিখিত হওয়াই শ্রেয়।উইল লিখিত হলে সাক্ষরিত হতে হবে । উইলকারীর অভিপ্রায় বুঝতে পারা গেলেই যথেষ্ট। 

লেখা সম্ভব না হলেওশুধুমাত্র ইশারা বা ভঙ্গিমার মাধ্যমে উইল করা যায়।মৃত্যুকালে একটি চিঠি লিখে সম্পত্তির বিন্যাস সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে গেলে সেই চিঠি উইল রূপে গণ্য হতে পারে। উইল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রয়োজন পড়ে না, রেজিষ্ট্রেশন আইনের ১৮ ধারা মতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস আবেদন করলে উইল সম্পর্কিত রেজিষ্ট্রার অন্তর্ভূক্তি করানো যায়।

 

উইলের প্রবেটঃ


কোনো উইল সরকারী ভাবে গ্রহণ করতে হলে আদালতের কাছ থেকে যে স্বীকৃতি নিতে হয় তাকেই প্রবেট বলে।একজন মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত উইল যখন যথাযথ প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হবে, তখন কোন প্রবেট লাভ না করলে ও তা সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেই হলে আর তিনি যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে  উইল করে তবে তা কার্যকর করার জন্য  প্রবেট করতে হয়। 

 

উইল রদ করণঃ

উইল বা অছিয়ত নামা রদ করা যায়।উইলকারী তার জীবদ্দশায় উইল রদ বা বাতিল করতে পারে।বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে উইলকারী তার উইল পত্ররদ করতে পারে।পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ-


উইলকারী তার কৃত উইল লিখিত বা মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে রদ বা প্রত্যাহার করতে পারে


.যদি উইলকারী উইলকৃত সম্পত্তিতে এমন কোনো কাজ করে, যার ফলে উক্ত সম্পত্তির পরিবর্তন সাধিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট উইলটি রদ হবে।


.উইল কৃত সম্পত্তিতে যদি উইল কারীর স্বত্বের অবসান ঘটে, তাহলে সংশ্লিষ্ট উইলটি স্বাভাবিক ভাবেই রদ হয়ে যাবে।


.উইল-গ্রহীতার উদ্দেশ্যে যে সম্পত্তি উইল করা হয়, তা যদি উইলকারী উইল করার পর অন্যের কাছে দান বা বিক্রি করে দেয় তা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উইলটি রদ বা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে গণ্য হবে।


. উইলকারী আদালতের মাধ্যমেও তার কৃত উইলরদ বা প্রত্যাহার করতে পারবে।



লেখক পরিচিতি 


নাজমুন সাকিব ইতি

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়